-
9789842001413 (HB)
- Adorn Publication
-
April 2009
- Rabindranath Tagore
-
0.6 (kg)
-
5.5"x8.5"
-
500
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) গোরা (১৯১০) এক অসাধারণ উপন্যাস। ঊনিশ শতকের শেষভাগে বঙ্গদেশে যে রাজনৈতিক-সামাজিক ধর্মীয় জিজ্ঞাসা ও আলোড়ন জেগেছিল, এই উপন্যাসে তার মাহকাব্যিক প্রকাশ আছে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র গোরা এক আইরশি সৈন্যের সন্তান, মিউটিনির সময়ে তাকে জন্ম দিয়েই তার মায়ের মৃত্যু ঘটে। সে লালিত হয় কৃষ্ণদয়াল ও আনন্দময়ীর সন্তান হিসেবে। নিজের জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে অজ্ঞাত গোরা একসময়ে ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হলেও পরে সে আত্মপ্রকাশ করে গোঁড়া হিন্দুরূপে। স্নেহময়ী মায়ের আচারহীনতায় সে মর্মপীড়া বোধ করে, আনন্দময়ী কেন যে বলেন গোরাকে পেয়েই তাঁর সর্বসংস্কারমুক্তি ঘটেছে, তা সে উপলব্ধি করতে সমর্থ হয় না। পিতৃবন্ধু ব্রাহ্ম পরেশবাবুর পরিবারে সে উপস্থিত হয় যোদ্ধৃবেশে-হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা প্রমাণ করা এবং পরিবারের মেয়েদের আকর্ষণ থেকে বন্ধু বিনয়কে উদ্ধার করার সংকল্প নিয়ে। হারাণবাবুর সঙ্গে তর্কে মেতে উঠে এখানে সে তার ভক্তি ও স্বদেশপ্রেমের ব্যাখ্যা করে। সুচরিতার মনে যে-আলোড়ন তোলে, গোরা তাকে দমন করতে চেষ্টা করে। এমন সময়ে, মৃত্যু আসন্ন মনে করে কৃষ্ণদয়াল তাকে তার জন্মবৃত্তান্ত জ্ঞাপন করেন। এক মুহূর্তের মধ্যেই গোরা দেখতে পায়, ভারতবর্ষের সমস্ত মন্দিরের দ্বার তার কাছে রুদ্ধ হয়ে গেছে। গোরার নবজন্ম হয় মানুষ হিসেবে, সুচরিতাকে গ্রহণ করার তার পক্ষে যেমন সম্ভব হয়ে ওঠে, আনন্দময়ীর মাতৃক্রোড়ও তেমনি নতুন গৌরব নিয়ে তার কাছে দেখা দেয়।
পরেশবাবুর শান্ত সমাহিত সহনশীল স্বাভাব, আনন্দময়ীর নিঃসঙ্গ মাতৃরূপ, বিনয়ের সবকিছুর দু দিক দেখার প্রবণতা, হারাণবাবুর একদেশদর্শিতা, বরদাসুন্দরীর সংকীর্ণতা, সুচরিতার অন্তরবাসী চৈতন্যের বিসর্পিল যাত্রা, ললিতার আত্মপ্রত্যয়, কৃষ্ণদয়ালের আত্মপরায়ণতা, পারিপার্শ্বিকের পরিবর্তনের হরিমোহিনীর চারিত্রিক পরিবর্তন, গোরার প্রতি তার শিষ্যদের স্থূল অনুরাগ-এর সবকিছু উপন্যাসে বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে। এই উপন্যাসে তর্কের অতিরেক অনেক পাঠককে অস্থির করে। এ-সম্পর্কে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কথা এই যে, প্রত্যেক চরিত্রের বক্তব্য তার জীবনের মর্মমূল থেকে উচ্চারিত, তার দিক দিয়ে তা সম্পূর্ণ যুক্তিসিদ্ধ। পরেশবাবু বা আনন্দময়ীর চরিত্রকে অনেকে রক্তমাংসের মানুষরূপে স্বীকার না করে তাঁদেরকে আদর্শের প্রতিনিধিরূপে দেখেছেন। তাঁরা যে আদর্শের বাহক, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সে-আদর্শ তাঁদের জীবননেতিহাস ও অভিজ্ঞতার জগৎ থেকে উঠে এসেছে, তাদের প্রতি আরোপিত হয়নি। ধর্মবর্ণদেশের ঊর্ধ্বে গোরার যে-উত্তরণ তাকে মুক্তি দিয়েছে, তার ভিত্তি গ্রন্থকারের আদর্শগত হলেও অবাস্তব নয়।
গোরা উপন্যাসে অঙ্কিত প্রতিবেশ সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত। ঊনিশ শতকের আশির দশক এই উপন্যাসের পটভূমি বলে অনুমান করা যায়। তৎকালীন কলকাতা ও মফস্সলের যে-চিত্র এখানে আমরা পাই, তা কল্পনার সামগ্রী নয়। পরেশবাবু ও কৃষ্ণদয়ালের অন্তঃপুরের চিত্র, পল্লিগ্রামে দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার, থানা-পুলিশের দৌরাত্ম্য, ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতাপ ও প্রজাকুলের প্রতি অবজ্ঞা, গোরার মতো শিক্ষিত যুবকের অন্যায়ের প্রতিবাদ, শাসকদের প্রতি হারাণবাবুর সম্মানবোধ-এসবের কোথাও অতিরঞ্জন নেই।
এই উপন্যাসে ব্যক্তিজীবনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত কেবল বৃহত্তর পটভূমিকায় স্থাপিত নয়, বৃহত্তর সামষ্টিক জীবনধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঘোষপুরে প্রজাদের পক্ষসমর্থনে গোরা ঐকান্তিক আগ্রহ, ঘটনাক্রমে তার বন্দি হওয়া, এই অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়ির আমন্ত্রণরক্ষায় ললিতার অরুচি, তার ফলে কিছুটা আকস্মিকভাবে স্টিমারে বিনয়ের সঙ্গে কলকাতায় ফিরে আসে এবং এই ঘটনা নিয়ে ব্রাহ্মসমাজে হারাণবাবুর আলোড়ন তার দৃষ্টান্ত। আবার, উপন্যাসের মধ্যে ধর্ম ও সমাজজীবনের যে-সমালোচনা আছে, তাও বাইরে থেকে আরোপিত নয়, পাত্রপাত্রীর জীবনাভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণের গভীরতা থেকে উদ্ভূত।
গোরা উপন্যাসের সঙ্গে জর্জ এলিয়ট-রচিত ফেক্সি হোলট (১৮৬৬) উপন্যাসের সাযুজ্যের কথা কেউ কেউ বলেছেন। এই সাদৃশ্যের কথা অস্বীকার না করেও বলা যায় যে, তা উপন্যাসের উপরিভাগের পক্ষে যতটা সত্য, এর গভীরতার স্তরের পক্ষে তা নয়। গোরা-চরিত্রের মধ্যে কেউ স্বামী বিবেকানন্দের উপস্থিতি লক্ষ করেছেন, কেউ বা বলেছে তার মধ্যে আছে বিবেকান্দের উপস্থিতি লক্ষ করেছেন, কেউ বা বলেছে তার মধ্যে কেউ স্বামী বিবেকানন্দের উপস্থিতি লক্ষ করেছেন, কেউ বা বলেছেন তার মধ্যে আছে বিবেকানন্দ ও ভগিনী নিবেদিতা উভয়ের সত্তার মিশ্রণ। এ-প্রসঙ্গে একটি তথ্য পাঠকের পক্ষে কৌতূহলোদ্দীপক হতে পারে। শিলাইদহে নিবেদিতা যখন রবীন্দ্রনাথের অতিথি ছিলেন, সে-সময়ে তাঁর অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে মুখে-মুখে একটি গল্প বলেন। গল্পটিতে ছিল গোরার কাঠামো। তবে মৌখিকভাবে কথিত গল্পে গোরার আইরিশ জন্মসূত্রের কথা জেনে সুচরিতা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। গল্পে এই পরিণতি শুনে নিবেদিতা খুব ক্রুদ্ধ হন। প্রকাশিত উপন্যাসের সমাপ্তি ভিন্ন প্রকার। এখন আমরা যে-সমাপ্তি দেখি, তা এই উপন্যাসের যৌক্তিক পরিণতি, তাতে নিবেদিতার আপত্তির ফল কতটুকু জড়িয়ে আছে, তা বলা শক্ত।
বর্তমান মুদ্রণে বিশ্বভারতী-প্রকাশিত রবীন্দ্র রচনাবলী (১৪০২) সুলভ সংস্করণ তৃতীয় খণ্ডে পাঠ অনুসৃত হয়েছে।
-আনিসুজ্জামান
জানুয়ারি, ২০০৯
সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালা আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের একটি সিরিজ প্রকাশনা।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যে আখ্যায়িকার শুরু, এ-কথা বলা যায়। ১৮৫৪ সালে তিনি কবি কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের উপাখ্যানভাগ বাংলায় পরিবেশন করেন। এরপর প্রায় শতবর্ষ ধরে বাংলা কথাসাহিত্যের যে-বিকাশ তার শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থগুলেকে পাঠকের কাছে একত্রে তুলে দেওয়ার আকাক্সক্ষা নিয়েই সিরিজটি পরিকল্পিত হয়েছে।
সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালার ২৪টি বই একসঙ্গে পাওয়া অত্যন্ত খুশির বিষয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আগামীতেও এরকম কিছু গ্রন্থ পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারবো বলে আমরা আশা রাখি।

Submit Your Review
Your email address will not be published. Required fields are marked *
-
John Doe March 22, 2021 at 1:54 pm
pellentesque habitant morbi tristique senectus et. In dictum non consectetur a erat. Nunc ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
-
John Doe March 22, 2021 at 1:52 pm
Nullam a magna porttitor, dictum risus nec, faucibus sapien. Ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
-
John Doe March 22, 2021 at 1:21 pm
In fermentum et sollicitudin ac orci phasellus. A condimentum vitae sapien pellentesque habitant morbi tristique senectus et. In dictum non consectetur a erat. Nunc scelerisque viverra mauris in aliquam sem fringilla.
-
John Doe March 22, 2021 at 1:52 pm
Nullam a magna porttitor, dictum risus nec, faucibus sapien. Ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
-
John Doe March 22, 2021 at 1:54 pm
pellentesque habitant morbi tristique senectus et. In dictum non consectetur a erat. Nunc ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
John Doe March 22, 2021 at 1:54 pm
pellentesque habitant morbi tristique senectus et. In dictum non consectetur a erat. Nunc ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
John Doe March 22, 2021 at 1:52 pm
Nullam a magna porttitor, dictum risus nec, faucibus sapien. Ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
John Doe March 22, 2021 at 1:21 pm
In fermentum et sollicitudin ac orci phasellus. A condimentum vitae sapien pellentesque habitant morbi tristique senectus et. In dictum non consectetur a erat. Nunc scelerisque viverra mauris in aliquam sem fringilla.