-
9789842001376 (HB)
- Adorn Publication
-
November 2011
- Indranath Bandopadhyaya
-
0.2 (kg)
-
5.0"x8.0"
-
88
সাহিত্যক্ষেত্রে ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবির্ভাব অনেকটা আকস্মিক। তিনি যখন কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করেন, তখন কিছুটা খেয়ালের বশেই ক্ষুদ্রকায় ব্যঙ্গকাব্য উৎকৃষ্ট কাব্যম্ (১৮৭০) রচনা করেন। পরে তারকানাথ গঙ্গোপধ্যায়ের অনুরোধে লেখেন কল্পতরু (১৮৭৪)। বঙ্কিমচন্দ্রের ইতিহাস-আশ্রিত রোমান্স এবং কল্পনাদীপ্ত সামাজিক উপন্যাস যে-সময়ে বাঙালি পাঠককে মুগ্ধ করে রেখেছিলেল, সে-সময়ে-অন্তঃপ্রেরণা থেকে হোক, জনপ্রিয়তালাভের আশায় হোক-অনেকেই তাঁকে অনুসরণ করেছিলেন। তখন তিনজন লেখক সম্পূর্ণ ভিন্ন পথ ধরে বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে আবির্ভূত হন। তারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় সাধারণ বাঙালি জীবনের প্রাত্যাহিক ছবি এঁকেছিলেন স্বর্ণলতায় (১৮৭৪), ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যঙ্গরসকে মূল উপজীব্য করে লিখেছিলেন কল্পতরু, আর ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় রূপকথার বস্তু নিয়ে রচনা করেছিলেন কঙ্কাবতী (১৮৯২)। তবে হাস্য ও ব্যঙ্গরসের ক্ষেত্রে ইন্দ্রনাথ যে বঙ্কিমচন্দ্র থেকে অনেকখানি প্রেরণালাভ করেন, তাতে সন্দেহ নেই। অবশ্য কমলাকান্তের দপ্তরে বঙ্কিমচন্দ্র যে উচ্চ ভাবকল্পনা, গভীর জীবনজিজ্ঞাসা ও অসাধারণ মনস্বিতার পরিচয় দেন, ইন্দ্রনাথের কাছ থেকে তা আমরা পাইনি। বরঞ্চ লোকরহস্যে উদ্দিষ্ট বিষয় নিয়ে যেমন ব্যঙ্গ আছে এবং মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিতে যেমন অতিরঞ্জন আছে, ইন্দ্রনাথ সেই পথ অনুসরণ করেছিলেন বলে ধারণা হয়।
ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নিষ্ঠাবান হিন্দু ছিলেন, সে-কারণে ব্রাহ্মদের সম্পর্কে তাঁর প্রবল বিতৃষ্ণা ছিল। একটি কবিতায় তিনি উইলসেন (সে যুগের ইইলসনস হোটেলে হিন্দু তরুণেরা অখাদ্য-কুখাদ্য খেতো) এবং কেশব সেনকে এক কাতারে ফেলেছিলেন। তাঁর বন্ধু বাঙ্গবাসী-সম্পাদক যোগেন্দ্রচন্দ্র বসুও ব্যঙ্গের সকল তূণ নিক্ষেপ করেছিলেন ব্রাহ্ম ও ব্রাহ্মিকাদের প্রতি। অবশ্য কেশবপন্থী ব্রাহ্মদের (তখন ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ) বিদ্রূপ করে এই ধরনের রচনা শুরু করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কিঞ্চিৎ জলযোগ (১৮৭২) প্রহসনে। তার অন্তত পঞ্চাশ বছর আগে থেকে বাংলা নকশা ও প্রহসনের একটি ধারা বয়ে আসছিল। নকশা ও প্রহসনের বিষয়কে উপন্যাসের ক্ষেত্রে তুলে নিয়ে আসা ইন্দ্রনাথেরই উদ্ভাবন। কল্পতরু বাংলা সাহিত্যের প্রথম ব্যঙ্গ-উপন্যাস।
বঙ্গদর্শনে সমালোচনা করতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র কল্পতরুকে ‘বঙ্গভাষার একটি উৎকৃষ্ট উপন্যাস’ আখ্যা দিয়েছেন এবং মতপ্রকাশ করেছেন যে, ‘বাবু ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় একখানি মাত্র গ্রন্থ প্রচার করিয়া বাঙ্গালায় প্রধান লেখকদিগের মধ্যে স্থান পাইবার যোগ্য বলিয়া পরিচিত হইয়াছেন।’ তবে তিনি যে কল্পতরুকে আলালের ঘরের দুলাল ও হুতোম প্যাঁচার নক্শার ওপরে স্থান দিয়েছেন, তার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন না। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সংগতভাবেই লক্ষ কেরছেন যে, এখানে ‘হাস্যরসের তর্জনীসংকেতে উপন্যাসের ঘটনাবিন্যাস ও চরিত্রায়ণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হইয়াছে।’ ফলে ঘটনা ও চরিত্র সবই প্রহসনোচিত অতিরঞ্জন-আক্রান্ত। এর মধ্যে অনেককিছুই উপভোগ্য, তবে চরিত্রসমূহ সবই একমুখী। নরেন্দ্রনাথ তরুণ ব্রাহ্ম যুবক, কিন্তু ব্রাহ্মধর্মপরায়ণতা তার স্বভাবের অঙ্গ নয়। ব্রাহ্মধর্ম অবলম্বন করে সে সংস্কারমুক্ত হয়েছে বটে, কিন্তু একদিকে ক্ষুদ্রতা ও ইন্দ্রিয়লোলুপতা, অন্যদিকে লোভ ও ভীরুতাই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। রামদাস সকলপ্রকার অসৎকর্মের পথপ্রদর্শক, শঠতায় তার জুড়ি নেই। গবেশচন্দ্র বিশিষ্ট প্রবঞ্চক। শ্রীরূপদাস বাবাজী ও তার বৈষ্ণব সঙ্গিনীরা ইন্দ্রিয়বিলাস। কেবল নরেন্দ্রনাথে অগ্রজ মধুসূদন সরলহৃদয়-সততা ও স্নেহপরায়ণতাই তার বিড়ম্বনার কারণ। বিমলা নানাভাবে নিপীড়িত, কিন্তু তার স্বাধীন কোনো পরিচয় আমরা পাই না। বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, ‘মনুষ্যহৃদয়ের সদ্গুণের পরিচিত লেখকের অভিপ্রেত নহে। যাহা তাঁহার অভিপ্রেত, তাহাতে তিনি সিদ্ধকাম হইয়াছেন বলিতে হইবে।
ইন্দ্রনাথের হাস্যরসিকতা যে কতদূর নির্ভেজাল ছিল, তার অন্য একটি পরিচয় আছে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে গঙ্গাতীরে আনা হয়। তিনি অন্তিম শয্যায় শয়ান, তাঁকে ঘিরে স্ত্রী ও জননী রোরুদ্যমান। ইন্দ্রনাথ সেই অবস্থায় বলেন ‘মা, তোমরা আর কাঁদিও না, একজন আমাকে ওদিকে টানিতেছে, এখন তোমরা এদিকে টানিতে থাকিলে আমি দোটানায় মারা যাব-তোমরা আর কাঁদিও না।’
বর্তমান সংস্করণের শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়-সম্পাদিত ইন্দ্রনাথ-গ্রন্থাবলীর (১৩৬৯) প্রথম খণ্ডে পাঠ অনুসৃত হয়েছে।
-আনিসুজ্জামান
জানুয়ারি ২০০৯
সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালা আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের একটি সিরিজ প্রকাশনা।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যে আখ্যায়িকার শুরু, এ-কথা বলা যায়। ১৮৫৪ সালে তিনি কবি কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের উপাখ্যানভাগ বাংলায় পরিবেশন করেন। এরপর প্রায় শতবর্ষ ধরে বাংলা কথাসাহিত্যের যে-বিকাশ তার শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থগুলেকে পাঠকের কাছে একত্রে তুলে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই সিরিজটি পরিকল্পিত হয়েছে।
সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালার ২৪টি বই একসঙ্গে পাওয়া অত্যন্ত খুশির বিষয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আগামীতেও এরকম কিছু গ্রন্থ পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারবো বলে আমরা আশা রাখি।

Submit Your Review
Your email address will not be published. Required fields are marked *
-
John Doe March 22, 2021 at 1:54 pm
pellentesque habitant morbi tristique senectus et. In dictum non consectetur a erat. Nunc ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
-
John Doe March 22, 2021 at 1:52 pm
Nullam a magna porttitor, dictum risus nec, faucibus sapien. Ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
-
John Doe March 22, 2021 at 1:21 pm
In fermentum et sollicitudin ac orci phasellus. A condimentum vitae sapien pellentesque habitant morbi tristique senectus et. In dictum non consectetur a erat. Nunc scelerisque viverra mauris in aliquam sem fringilla.
-
John Doe March 22, 2021 at 1:52 pm
Nullam a magna porttitor, dictum risus nec, faucibus sapien. Ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
-
John Doe March 22, 2021 at 1:54 pm
pellentesque habitant morbi tristique senectus et. In dictum non consectetur a erat. Nunc ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
John Doe March 22, 2021 at 1:54 pm
pellentesque habitant morbi tristique senectus et. In dictum non consectetur a erat. Nunc ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
John Doe March 22, 2021 at 1:52 pm
Nullam a magna porttitor, dictum risus nec, faucibus sapien. Ultrices eros in cursus turpis massa tincidunt ante in nibh mauris cursus mattis. Cras ornare arcu dui vivamus arcu felis bibendum ut tristique.
John Doe March 22, 2021 at 1:21 pm
In fermentum et sollicitudin ac orci phasellus. A condimentum vitae sapien pellentesque habitant morbi tristique senectus et. In dictum non consectetur a erat. Nunc scelerisque viverra mauris in aliquam sem fringilla.