সমকালীন সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সৈয়দ তোশারফ আলী একটি সুপরিচিত নাম। তার সাহিত্যসমালোচনা, গবেষণাধর্মী নিবন্ধ ও সাবলীল অনুবাদ পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত থাকায় তাঁর সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চা রাজনৈতিক চেতনায় শাণিত। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপর বিশ্লেষণধর্মী ও সমালোচনামূলক মতামত রেখে যাচ্ছেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ, যুদ্ধপরবর্তী পূর্ববাংলার স্বাধিকার আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ও জলোচ্ছ্বাস এবং সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনও মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ এবং প্রবাসী সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত অন্যতম পলিটিক্যাল মটিভেটর হিসেবে ৯নং সেক্টরে দায়িত্ব পালন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর নিজ এলাকার পুনর্গঠনে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন তাঁর অভিজ্ঞতাকে করে সমৃদ্ধ। তার মানসগঠনে মাতা-পিতা, শিক্ষক ও শুভানুধ্যায়ীদের ভূমিকার পাশাপাশি ব্যাপক অধ্যয়নও মূল্যবান ভূমিকা রেখেছে। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দক্ষিণ বাংলার নদী-নালা, খাল-বিল পরিবেষ্ঠিত সবুজ-শ্যামল গ্রামীণ পরিবেশে। শিক্ষালাভ করেছেন বাগেরহাট, রাজশাহী ও ঢাকায়। উত্তর জনপদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির পাদপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্বে অধ্যয়ন করেছেন। তখন তিনি প্রখ্যাত সাংবাদিক মুহ. আসফ-উদ-দৌলা রেজার অনুপ্রেরণায় ১৯৭৬ সালে দৈনিক ইত্তেফাকর সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদান করেন এবং দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় সহকারী, সহকারী সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে তিনি ইত্তেফাক থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি সাপ্তাহিক রোববারর নির্বাহী সম্পাদক, সিনিয়র কলামিস্ট এবং সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অবসর গ্রহণের পর ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত দৈনিক বর্তমান পত্রিকায় প্রখ্যাত কথাশিল্পী রাহাত খানের সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ইত্তেফাক ভবন থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক দি নিউ নেশনের উপ-ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং সাপ্তাহিক রোববার পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে তিনি বক্তৃতা, বিতর্ক ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি রাকসু (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) আয়োজিত বক্তৃতা, বিতর্ক ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় তিনটি বিষয়ে অংশ নিয়ে প্রতিটি বিষয়ে প্রথম হন এবং সেই সুবাদে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে এবং সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ইতোমধ্যে তিনি গান্ধী পিস অ্যাওয়ার্ড, শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, নওয়াব ফয়জুন নেসা স্বর্ণপদক, হাজি শরীয়তুল্লাহ মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ পদক, স্বদেশ সমাজকল্যাণ সংসদের স্বাধীনতা পদক, কণ্ঠস্বর পদক, বাগেরহাট ফাউন্ডেশন পদক, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন পদকসহ অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা লাভ করেছেন। রাজনীতি-অর্থনীতি-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য-ধর্ম এবং খেলাধুলাসহ বিচিত্র বিষয়ে লেখালেখিতে সিদ্ধহস্ত সৈয়দ তোশারফ আলীর রচিত, সম্পাদিত ও অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা বারোটির অধিক। এরমধ্যে নির্বাচিত রাজনৈতিক কলাম, শেখ মুজিব : একটি মূল্যায়ন, মুক্তির আলপনা, সমাজ ও সাহিত্য, সমাজ ও রাজনীতি, বাংলাদেশের হৃদয় হতে, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সৈয়দ তোশারফ আলী অনূদিত মনীষী এম.এন রায়ের ‘হিস্টোরিক্যাল রোল অব ইসলাম’ প্রন্থটির একাধিক সংস্করণ স্বনামধন্য দ্যু প্রকাশন প্রকাশ করেছে। ‘বঙ্গবন্ধুর মহত্ব ও গরিমা’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশের তালিকায় রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তিনি লিখে চলেছেন। সমাজ-ধর্ম ও বিজ্ঞানের উপর লেখা একটি প্রবন্ধের বই এবং সাহিত্য বিষয়ে দুটি নিবন্ধের বই, ‘তবু মনে রেখো’ শীর্ষক একটি নির্বাচিত কলামের সংকলন ছাড়াও ভারতের জাগরণ, সংগ্রাম, বিভক্তি ও প্রাপ্তি সম্পর্কে একটি ইতিহাসগ্রন্থ ‘শেষ কথা কে বলবে?’ এবং ‘বঙ্গীয় চিন্তার গাতি ও গন্তব্য’ শীর্ষক অপর একটি মূল্যবান গ্রন্থ (ঐতিহ্যের মত বিখ্যাত প্রকাশনা প্রকাশ করছে। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য এবং বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তার পিতা মরহুম সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (১৮৯৭-১৯৭০) ছিলেন একজন স্বদেশী চিকিৎসক, সমাজ ও সংস্কৃতিসেবী এবং তার মাতা মরহুমা সুলতানা রিজয়া ছিলেন একজন বিদূষী মহিলা। সৈয়দ তোশারফ আলী ১৯৮০ সালে বাগেরহাটের আফরা নিবাসী সমাজসেবী শেখ লুৎফর রহমান ও মরিয়ম বেগমের কন্যা দিলরুবা আলী (লাকী)কে বিয়ে করেন। তারা দুই পুত্র ও দুই কন্যার জনক ও জননী। জ্যেষ্ঠপুত্র ড. সৈয়দ আলী তারেক লন্ডনে অধ্যাপনা করেন এবং দ্বিতীয় পুত্র প্রকৌশলী সৈয়দ আলী রেজা দেশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কন্যাদ্বয় ঢাকার নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি অনার্স ও এলএলএম শেষ করে অ্যাডভোকেটশিপ অর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Showing 1-2 of 2 Books